২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশন গার্মেন্টসে আগুনে পুড়ে মৃত্যু বরণ করেছেন ১১১ জন পোশাক শ্রমিক, সেখানে রাতভর ফায়ার ফাইটিং করেছি বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাথে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধস হয়, নির্মমভাবে মৃত্যু হয় ১১৭৫ জন পোশাক শ্রমিকের। প্রথম দিন থেকেই সিডিএমপি প্রশিক্ষক এবং আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ার হিসাবে উদ্ধার কাজে ছিলাম। টানা ৪ দিন কাজ করে এক দিনের বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজ করেছি উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন। কত লাশের উপর দিয়ে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করেছি। পা কেটে এক নারীকে বের করে নিয়ে আসার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী আমি।

রানা প্লাজায় কাজ করার পর প্রায় তিন মাস পর্যন্ত বীভৎস দৃশ্য ঠিকমত ঘুমাতে দেয় নি। প্রতিটি ড্রেস থেকে লাশের গন্ধ পেতাম। খাবার খাওয়ার সময়ও নাকে লাশের গন্ধ ভেসে আসতো। আপনারা বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, এখনও রানা প্লাজার সামনে গেলে আমি লাশের গন্ধ পাই।
যাহোক এই বড় দু’টি দুর্ঘটনা এবং দেশের অন্যান্য অগ্নিদুর্ঘটনায় অজ্ঞতা বশত অনেক তাজা প্রাণ ঝড়ে পড়েছে, অনেকেই আহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন।
আমি সিডিএমপি’র প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করি ২০১১ সালে। তখনও শিক্ষার্থী ছিলাম। ২০১১ এর ডিসেম্বরে ট্রেনিং অব ট্রেইনার্স কোর্স সম্পন্ন করেছি বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে এর পর ২০১৫ সালে চিনের বেইজিং থেকে কমিউনিটি বেইজড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট শীর্ষক ওয়ার্কশপ করেছি। ৬ বছর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাথে কাজ করেছি আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ার তৈরির সিডিএমপি প্রজেক্টে। সবকিছু মিলে সামান্যতম জ্ঞান অর্জন করেছি যা দিয়ে নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কিছুটা কাজ করা যাবে বলে হয়।
নিজের দায়বদ্ধতার কথা মনে পড়ে গেল, দেশের কল্যাণে নিজের অর্জিত জ্ঞানটুকু মানুষের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে ভেতর থেকে তাড়না পেলাম। সেফটি স্কুল নামে সীমিত পরিসরে প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করলাম। বিভিন্ন আবাসিক ভবন, শিল্প প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সরকারী প্রতিষ্ঠানসহ অনেকেই প্রশিক্ষণের জন্য ডাক দিল। বিনা পারিশ্রমিকে দুই শতাধীক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি করেছি। আস্তে আস্তে সেফটি স্কুল এর পরিধি বৃদ্ধি পেল, সেফটি ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন নামে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে নিবন্ধন পেলাম। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ এবং জনসচেতনতায় কাজ করে চললাম।
অগ্নিকান্ডে নিরাপত্তা, ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনা, সড়ক নিরাপত্তা, বজ্রপাত ব্যবস্থাপনা, বন্যা ব্যবস্থাপনা, ভূমিধস, জরুরী উদ্ধার পদ্ধতি, প্রাথমিক চিকিৎসা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা বিষয় নিয়ে দেশ জুড়ে কাজ করে চলছি আমরা।
দেখতে দেখতে সেফটি ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন ৭ম বছরে পদার্পণ করল আজ। আজকের এই দিনে দেশের সকল স্বেচ্ছাসেবককে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। রানা প্লাজাসহ অন্যান্য দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করি।
সকলেই সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
লেখক-
সাখাওয়াত স্বপন
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, সেফটি ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন
shakhawat2511@gmail.com